বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব আলোচনা কর।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব | অনার্স ৩য় বর্ষ

গ' বিভাগ

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। অনার্স প্রথম বর্ষ।

অজকের আলোচনা, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব আলোচনা কর।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব।


প্রশ্নঃ ২। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব আলোচনা কর।

 উত্তর:  ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি ভূ-প্রকৃতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ, যেখানে নদী, জলাভূমি, পর্বত ও সমুদ্রের মেলবন্ধন ঘটেছে। এর ভূ-প্রকৃতি শুধুমাত্র দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেনা, বরং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে গভীর প্রভাব ফেলে। দেশটির ৭০% জনসংখ্যা কৃষির উপর নির্ভরশীল, এবং ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্য কৃষির উৎপাদন, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, এবং মৎস্যচাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে, যা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করে। এই প্রেক্ষাপটে, ভূ-প্রকৃতির প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্লেষণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কেবল প্রকৃতি ও মানব সমাজের সম্পর্কই নয়, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কার্যকারিতা ও দিকনির্দেশনাকেও নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব : বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, ভূ-প্রকৃতি যেসকল প্রভাব বিস্তার করে নিম্নে তা আলোচনা কর হল।
১.জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত: বাংলাদেশের জলবায়ু মিশ্রিত জলবায়ু। এখানে শীত, বর্ষা, গ্রীষ্ম পরিলক্ষিত হয় । বর্ষাকালে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, যা কৃষির জন্য উপকারী। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টি বন্যার ঝুঁকি বাড়ায় যা এখানকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
২.নদী ও জল সম্পদ: বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক নদী রয়েছে, যা কৃষি ও মৎস্যজীবিতে সহায়তা করে। নদীর পানির প্রাপ্যতা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করে। আবার নদীর মাছ এদেশের মানুষের জীবিকার উৎস হিসেবে কাজ করে।
৩.মাটি ও কৃষি: বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ হওয়ায় এখানকার মাটি উর্বর প্রকৃতির। এই উর্বর মাটি বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনের প্রধান উৎস হিসাবে কাজ কর । আর কৃষি উৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস।
৪.প্রাকৃতিক দুর্যোগ: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এখানে প্রচুর পরিমাণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও নদী ভাঙন দেখা দেয়। যার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই দুর্যোগগুলো কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষতি সাধন করে।
৫.অবকাঠামো ও যোগাযোগ: ভূ-প্রকৃতি অবকাঠামোর উন্নয়নকে প্রভাবিত করে। নদী ও পাহাড়ি অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ায়, এখানকার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
৬.পর্যটন সম্ভাবনা: বাংলাদেশ সৌন্দর্যের লীলাভূমির একটি দেশ। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ বাংলাদেশের পর্যটন খাতে অবদান রাখে, যা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
৭.নিবন্ধিত শিল্প ও কৃষির আধুনিকায়ন: এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য শিল্পের কাচামাল হিসাবে ব্যবহারিত হয়। তাছাড়া এখানকার ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্র্যের কারণে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটছে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করেছে।
৮.নদী-মহাসাগরের ভূমিকা: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী এবং বঙ্গোপসাগরের নিকটতা মৎস্য ও জলজ সম্পদের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করে, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৯.বন্যা এবং নদী ভাঙন: বন্যা ও নদীভাঙন বাংলাদেশের একটি জাতীয় সমস্যা। বন্যা ও নদীভাঙনের ফলে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অনেকে ঘরবাড়ি হারায়, ফলে শ্রমশক্তির অভাব সৃষ্টি হয় এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।
১০.জীববৈচিত্র্য: দেশের ভূ-প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং প্রাণীর আবাসস্থল তৈরি করে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে এবং পর্যটন শিল্পেরও একটি উৎস হিসেবে কাজ কর।
১১.জলবায়ু পরিবর্তন: সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অর্থনীতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে, বিশেষ করে কৃষি এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে এর ভয়াবহতা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়।
১২.শিল্পায়ন ও নগরায়ণ: ভূ-প্রকৃতি কিছু অঞ্চলে শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। নদী তীরবর্তী এলাকায় শিল্পায়ন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের উন্নতি হচ্ছে, যা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে।
১৩.জলবিদ্যুৎ উৎপাদন: দেশের বিভিন্ন নদী ও জলাশয় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা শক্তি সরবরাহে সহায়তা করে। আর এই জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৪.ফসলের বৈচিত্র্য: এদেশের ভূ-প্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের কারণে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা সম্ভব হয়, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদে জন্য আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে।
উপসংহার: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূ-প্রকৃতির প্রভাব গভীর এবং বহুমাত্রিক। দেশের উর্বর মাটি, নদী-জলাশয় ও জলবায়ু কৃষি, মৎস্যচাষ এবং অন্যান্য শিল্পে অবদান রাখছে। যদিও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এই অর্থনীতির স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়, তবুও সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা গ্রহণের মাধ্যমে এর সুযোগকে কাজে লাগানো সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে উন্নত প্রযুক্তি এবং গবেষণার মাধ্যমে এই ভূ-প্রকৃতির সুবিধাগুলি সর্বাধিক করা গেলে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। সুতরাং, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থায়িত্বের জন্য ভূ-প্রকৃতির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন