বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস।

আজকের আলোচনা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা ও জাতির পিতা। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, এবং আপোষহীন সংগ্রাম বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ধাপেই তাঁর অবদান ছিল অসামান্য। তাই বলা যায়, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ইতিহাস কল্পনাই করা যায় না।



স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা

বঙ্গবন্ধুর প্রধান ভূমিকা ছিল জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করা এবং নেতৃত্ব দেওয়া তিনি রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শুরু করে সাংগঠনিক কর্মসূচি পর্যন্ত সবকিছুকে স্বাধীনতার পথে পরিচালিত করেছিলেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। নিম্নোক্ত এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হল। 

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ষড়যন্ত্র করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিবাদ জানান। তিনি “বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার” দাবির অন্যতম সংগঠক ছিলেন। যদিও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি কারাগারে ছিলেন, তবুও আন্দোলনকারীদের জন্য তাঁর উৎসাহ ও নেতৃত্ব ছিল প্রেরণার উৎস।


যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এই নির্বাচনে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ জোট গঠিত হয়েছিল। যুক্তফ্রন্ট বিপুলভাবে জয়ী হয়ে পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতার শক্তিশালী বার্তা দেয়। এটি বাঙালির রাজনৈতিক জাগরণের বড় ধাপ ছিল।


বঙ্গবন্ধু কর্তৃক ছয় দফা দাবি উত্থাপন

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন, যা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ নামে পরিচিত। এই দাবিতে অর্থনীতি, রাজনীতি ও প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। ছয় দফার মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি ও স্বশাসন প্রতিষ্ঠা


আগরতলা মামলা

১৯৬৮ সালে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তাঁকে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু সারাদেশে তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এই ঘটনার ফলে বঙ্গবন্ধু আরও জনপ্রিয় ও সর্বজনীন নেতা হয়ে ওঠেন।


আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল নির্ণায়ক। সারাদেশে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠলে বঙ্গবন্ধু আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকেন। আন্দোলনের ফলে আইয়ুব খান ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়।


আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রধান শক্তি। তিনি দলকে জনমুখী করে তুলেছিলেন এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সম্পৃক্ত করেছিলেন। আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে স্বাধীনতার আন্দোলনের মূল সংগঠন।


৭০ এর নির্বাচন ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। আওয়ামী লীগ ১৬৭ আসনের মধ্যে ১৬০টির বেশি আসন পায়। এই ফলাফলে প্রমাণিত হয় যে, বাঙালি জাতির একমাত্র প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে, যা আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তোলে।

অসহযোগ আন্দোলন

১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিলের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। মার্চ মাসে পুরো দেশ কার্যত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় চলতে থাকে। সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত—সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর আদেশই কার্যকর হয়। এতে পাকিস্তান সরকারের নিয়ন্ত্রণ অচল হয়ে পড়ে।


মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন সার্চলাইট চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। তবে তাঁর আগে দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বন্দী থাকলেও সমগ্র যুদ্ধ তাঁর আদর্শ, নেতৃত্ব ও নির্দেশনার আলোকে পরিচালিত হয়েছিল।



বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি ধাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অপরিসীম। ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ছয় দফা দাবি, আগরতলা মামলা, গণআন্দোলন, ৭০ এর নির্বাচন, অসহযোগ আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ—সবক্ষেত্রেই তিনি বাঙালি জাতিকে একত্রিত করেছিলেন। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। তাই যথার্থভাবেই তিনি জাতির পিতা উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

6 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন